সহকারী জজ নিয়োগের জন্য চতুর্দশ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের (১৪তম বিজেএস) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রায় দুই বছরেও নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হয়নি। তিন ধাপে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ পাওয়ার পরও গেজেট না হওয়ার কারণে চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না ১০২ জন প্রার্থী। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ১৪তম বিজেএসের মাধ্যমে সহকারী জজ নিয়োগের জন্য গত বছরের ১৯ জানুয়ারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন গত বছরই প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা নেয়। এ বছর মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত ২১ এপ্রিল চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ১০২ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। কিন্তু এখনো গেজেট না হওয়ায় তাঁরা চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না। অর্থাৎ ২৩ মাসেও ১৪তম বিজেএসের নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হয়নি।
চতুর্দশ বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিবেদন দিতে দুই মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। অথচ চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর প্রায় আট মাসেও গেজেট প্রকাশ করা হচ্ছে না। যোগদানের জন্য সুপারিশ পেয়ে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু নিয়োগ পেতে দেরি হওয়ায় এখন হতাশ।’
সহকারী জজ নিয়োগের সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর ২০০৭ সালে এই কমিশন গঠিত হয়। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন, নিম্ন আদালত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা বলছেন, নিম্ন আদালতে মামলাজট তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ নতুন বিচারক নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা। সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা দ্রুত চাকরিতে যোগ দিতে পারলে এ জট কমত।
চতুর্দশ বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন চাকরিপ্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয় গত ৩০ মার্চ। এতে ১ হাজার ৯৬৩ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। প্রায় দুই হাজার প্রার্থীর ভেরিফিকেশন শেষে গত ১ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করা এবং তারা চাকরিতে যোগদানও করেছেন। অর্থাৎ দুই হাজার প্রার্থীর ভেরিফিকেশন সাত মাসে শেষ হয়েছে। কিন্তু সহকারী জজ নিয়োগের মাত্র ১০২ জনের ভেরিফিকেশন শেষে গেজেট আট মাসেও প্রকাশ করা হচ্ছে না।
সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীর বয়স ৩২ বছর হলেও আবেদন করা যায়। চতুর্দশ বিজেএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় যাঁর বয়স ৩২ বছর ছিল, তাঁর এখন বয়স ৩৪ বছর হলেও চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না। অনেকের আত্মীয়স্বজন চাকরি আসলেই হয়েছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। শুনতে হয় নানা কটু কথা। অনেকে বিচারক হয়ে এ অল্প সময়ের জন্য আত্মসম্মানের কারণে কোনো অস্থায়ী চাকরিতে যোগ দেন না। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান এই অল্প সময়ের জন্য চাকরি দিতেও ইচ্ছুক নয়। ফলে সুপারিশপ্রাপ্তদের বহন করতে হচ্ছে বেকারত্বের বোঝা। অনেকের পরিবারে বৃদ্ধ মা-বাবার চিকিৎসা, ভাই-বোনদের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিজেএসসি সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় ও চতুর্থ বিজেএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের দুই থেকে চার মাসের মধ্যে যাচাই প্রতিবেদন শেষ হয়েছিল। এই দুবারে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লেগেছিল কম। কিন্তু এরপর থেকে প্রতিটি বিজেএসের নিয়োগ শেষ করতে ক্রমেই সময় বাড়ছে। মূলত পুলিশি যাচাই প্রতিবেদন ও অন্যান্য প্রক্রিয়াতেই সময় লাগছে বেশি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন ও বিচার বিভাগের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ৮ ডিসেম্বর আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশনের সব তথ্য পেয়েছি। আরও কিছু কাজ বাকি আছে। এগুলো শেষ করে জানুয়ারি মাসে কর্মকর্তাদের পদায়ন দিতে পারব বলে আশা করছি।’